November 22, 2024, 9:17 pm
শেখ হাসান বেলাল : করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে টেলিভিশন সংবাদে লাইভের জন্য প্রযুক্তিগত ক্যামেরার সামনে বুম হাতে দাড়িয়ে ছিলাম। অনেকটা ফাঁকা হলেও শহরের সড়কে দাড়িয়ে করোনা ঝুকির ভয় পাচ্ছিলাম।
পাশেই এক রিক্সাওলাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। ইশারা দিয়ে সরে যেতে বললাম। আমি সরে যেতে বলেছি বলে পাশে ডিউটিরত পুলিশও রিক্সাওলাকে সরে যেতে বললেন। রিক্সাওলা সরে একটু দুরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকল। লাইভ শেষে সব যখন গোছাচ্ছি, তখন রিক্সাওলা কাছে এসে নিজের মাক্স খুলে বললেন ভাই চিনতে পারলেন?
নাম মনে নেই, একসময় প্রেসক্লাব এর নিচে গার্মেন্টস এর দোকানে বসত। সেখানেই তার সাথে পরিচয়। দীর্ঘদিন অসুখে ভুগে সম্প্রতি তার মা মারা গেছে। রিক্সা চালিয়ে আর মানুষের সাহায্যদান নিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাতো। মাঝে মাঝে আমিও টুকটাক সহযোগীতা করেছি।
বললাম, কি খবর। বললো “ছোট ছেলেটার অসুখ। না বারালে চলছে না। খাব কি। ওষুধ কিনতে হবে। আগে ডেলি (প্রতিদিন) ৫-৬ শ’ ট্যাকাও হতো। আজ সকাল থেকে রিক্সায় চড়া কোন মানুষ পালাম না। করোনার কারনে শহরডায় কোন মানুষ নেই। অসুখের ছেলেটা খালি ভালমন্দ খাতি চাই। এখন পর্যন্ত ৩০ ট্যাকা পাইছি, এ দিয়ে ওষুধও হবে নানে”।
বলতে থাকেন উনি…
আমি তার চোখের দিকে তাকালাম। চোখ দুইটা টলমল করছে। সেই চোখে অনেক কিছু দেখলাম .. নিজের ক্ষুধার কষ্ট, পরিবারের মানুষের ক্ষুধা মেটাতে না পারার কষ্ট আর সামনের দিনগুলোতে বাঁচতে না পারার তীব্র আশংকা আর একটা ভয়ংকর রকমের নিঃসীম শূন্যতা !
পকেট থেকে ১০০ টাকা দিয়ে একরকম পালিয়ে আসলাম। এভাবে না হয় আজকে ওষুধটা জুটল .. কিন্তু কাল? পরশু? তারপর?
তেলো মাথায় তেল দিয়ে ছবি ওঠায়েন না। প্রকৃত অসহায় মানুষের হাতে খাবার তুলে দিন।
………
খেটে খাওয়া মানুষগুলো ভালো নেই, ফাঁকা শহরটার অলিতে গলিতে ক্ষুধায় কাতরাতে থাকা ছিন্নমূল মানুষরা হন্যে হয়ে খাবার খুঁজছে, ব্যস্ততা নিয়ে পাশ দিয়ে দু এক জন গেলে তাদের দিকে ব্যর্থতার করুণ চাহনি।
ক্ষুধার্ত মানুষের এই বোবা ভাষা বুঝি না .. মানুষের নীরবতা বুঝি না .. শুধু বুঝি ঃ
এই শূন্য প্রায় নীরব শহরটাতে কেউ ভালো নেই .. সবার চোখের সামনে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ভয়, ক্ষুধার কাছে কিংবা ভাইরাসের কাছে !
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক কুষ্টিয়া ও স্টাফ রিপোর্টার আরটিভি।
Leave a Reply